রাজশাহীতে এক কলেজ ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে হিটলার মাহমুদ নামে এক যুবলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।
আপত্তিকর ভিডিও ধারণের পর ভাইরালের কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করারও অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীতে সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী এসব অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। তার বাসা জেলার বাগমারা উপজেলায়। অভিযুক্ত হিটলার মাহমুদ জেলার বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর তার বাবা আমজাদ হোসেন গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ: সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে ওই কলেছাত্রী বলেন, ২০২০ সালের মে মাসে হিটলারের সাথে আমি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। তখন বুঝতে পারিনি সে একজন প্রতারক ও নারীলোভী। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সঙ্গে সে শারীরিক মেলামেশা করে।
বাগমারার ভবানীগঞ্জ তক্তপাড়ায় তার এক বোনের বাসায় নিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করত। তখন কিছু আপত্তিকর ভিডিও করে রাখে এবং এগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। কিন্তু বিয়ের জন্য চাপ দিলে নানা তালবাহানা করে সে। গোপনে ধারণ করা কিছু ছবি ও ভিডিও আমার কাছে পাঠায় এবং বলে তার সঙ্গে মেলামেশা অব্যাহত না রাখলে এসব সে ছড়িয়ে দেবে।
কলেজছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ঝাউতলা মোড়ের একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে সে আমার সঙ্গে রাতে থাকে এবং শারীরিক মেলামেশা করে। বলে, পরদিন বিয়ে করবে। কিন্তু পরদিন বিয়ে না করে সে আমাকে আবারও বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে গত ২৮ নভেম্বর আদালতে একটি মামলা করেছি।
কলেজছাত্রী বলেন, হিটলার যুবলীগের কর্মী। তার বাবা আমজাদ হোসেন মেম্বার গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আওয়ামী লীগ আমলে সে আমলে সে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় দাপট দেখাতো। কিন্তু তার মামা সাখাওয়াত হোসেন বল্টু বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও মনোনয়ন প্রত্যাশী, তার খালু বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা এনামুল হক বাসুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। এখন সে তাদের পরিচয়ে বিএনপির দাপট দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় আমি সুষ্ঠু বিচার পাব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছি। হিটলার মাহমুদ একজন নারীলোভী ছেলে। সেটা আমি অনেক পরে বুঝেছি। যখন বুঝেছি, তখন কিছু ভিডিও এবং ছবির কারণে আমি তার কাছে জিম্মি। আমি বাধ্য হয়ে দিনের পর দিন তার সঙ্গে মেলামেশা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। থানায় যাই, কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো বসিয়ে রেখে প্রমাণ দেখার পর দুর্ব্যবহার করে।
কলেজছাত্রী দাবি করেন, হিটলার আগে তিনটি বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল রিতা। ১২ বছর সংসার করেছিল তার সঙ্গে। একটা বাচ্চাও হয়েছিল। কিছুদিন পর বাচ্চা মারা যায়। রিতা থাকতেই রাজিয়া সুলতানা ইভা নামের এক মেয়ের সাথে সে ৪ বছর প্রেম করে। জোর করে ইভা হিটলারকে বিয়েও করে। কয়েকবছর পর তাদের তালাক হয়ে যায়।
এখনো ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে হিটলার। মিতু নামের আরেক মেয়ের সাথেও সম্পর্ক ছিল হিটলারের। আরও একাধিক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে। হিটলার মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নেয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে তার বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী।
তবে এসব অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত হিটলার মাহমুদ। তিনি বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। ওর মতো মেয়েকে এরকম করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সে ওই কোয়ালিটির না, যদি হতো তাহলে এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন সে করতো না।
হিটলার মাহমুদ বলেন, একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার মেলামেশা আছে। তার বাবা একটা চরিত্রহীন। তারা বাবাও একাধিক মেয়ের মামলায় ঝুলে আছে, জেল খাটছে এবং মামলা চলমান আছে- এটা আমরা সবাই জানি। উনার অনেক প্রবলেম, বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি-ধামকি দেয়, আমাদের ব্ল্যাকমেইল করে, ২০ লাখ টাকা চায়, ৩০ লাখ টাকা চায়, জমি লিখে চায়, বড়লোক হওয়ার ধান্দা। আমি নিজেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার।
এ ব্যাপারে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা অন্য এলাকার। তাই আমার থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে ওই এরিয়ার থানায় মামলার পরামর্শ দেই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেসব সঠিক নয়। আমার অফিসারকে ফোন দিয়ে গালাগালি করেছে।